সাদী মোঃ হিমেল :
আজ আপনাদের এমন একজন মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দিব, যার সবচেয়ে পছন্দনীয় পরিচয় সে একজন স্বেচ্ছাসেবক। তার নাম মুহাঃ নাছির উদ্দিন হাওলাদার।
কানাডায় বসবাস করলেও তিনি তার জন্মভূমি ইন্দুরকানীকে ভুলতে পারেননি। তার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হ্যাবিট্যাট ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট’ (এইচডিটি) দিয়ে তিনি দেশের দুর্গম এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
ছোটবেলা থেকেই মানবতার সেবক
শৈশব থেকেই মানুষের সেবা করার প্রতি আগ্রহী নাছির উদ্দিন গ্রামের শতাধিক শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুলব্যাগসহ শিক্ষা উপকরণ বিতরণের মধ্য দিয়ে ২০১১ সালে এইচডিটি প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ, চরের অসহায় মানুষদের জন্য কোরবানির আয়োজন, অসুস্থ অসহায় রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা, হুইল চেয়ার বিতরণ, মসজিদের সৌচাগার নির্মান, ফ্রী টয়লেট পেপার বিতরণ, গৃহহীনের জন্য গৃহ নির্মাণ, গভীর নলকূপ স্থাপন, প্রতিবন্ধীস্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা করে আসছে এইচডিটি। করোনাকালে ইন্দুরকানীর মানুষের জন্য সব চেয়ে বেশি সহযোগিতা করে এইচডিটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
নাছির উদ্দিন হাওলাদার ইন্দুরকানীর বালিপাড়ার চরবলেশ্বর গ্রামের মরহুম মাহবুবুল হক হাওলাদার ও রহিমা হক দম্পতির ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৪ সালে। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। শিক্ষাজীবন গ্রাম থেকেই শুরু তাঁর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রি অর্জনের পর নাছির উদ্দিন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনে কর্মরত ছিলেন। ব্যস্ত কর্মজীবনের মধ্যেও তার স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন এইচডিটির কার্যক্রম দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। পিরোজপুর ইন্দুরকানি থেকে সংগঠনের কাজ বিস্তার ঘটে সমস্ত পিরোজপুরে। আস্তে আস্তে পিরোজপুরের গণ্ডি পারে হয়ে ঢাকা , রংপুর , চাঁদপুর , রাঙামাটি
পৌছে গেছে এইচডিটি এর স্বেচ্ছাসেবক মূলক কাজ।
২০১৭ সালে স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে স্বপরিবারে কানাডায় গমন করেন নাছির।বর্তমানে তিনি কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় ফেডারেল সরকারের অধীনে কর্মরত আছেন।কানাডায় চলে যাওয়ার পরও থেমে থাকে নি তার স্বেচ্ছাসেবক মূলক কাজ। বরং আরো দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে।
কানাডায় থেকেই মাত্র এক বছরে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের সাড়ে তিন হাজার মানুষের রক্তের গ্রুপ বিনা মূল্যে নির্ণয় করে দিলেন নাসির উদ্দিন হাওলাদার। তিনি তার বন্ধু ও দাতাদের সহায়তায় পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর সাঈদখালী চরের শিশুদের জন্য পরিচালনা করছেন বাতিঘর নামের একটি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়। বছরে শতাধিক অসহায় নারীর হাতে তুলে দিচ্ছেন সেলাই মেশিন।
ইন্দুরকানীর উপজেলার সর্ববৃহৎ পাবলিক কবরস্থান স্থাপিত হয়েছে তাঁর হাত ধরে। ইন্দুরকানীর পিতৃমাতৃহীন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জান্নাতী দিচ্ছেন প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকার বাজার সদায়। আর যে কোন অসহায় মানুষের চিকিৎসার জন্য নিয়মিত ভাবে সহযোগিতা করেই আসছেন। তাছাড়া প্রথম থেকেই শিশুদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এই স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনটি। বর্তমানে শিশুদের নিয়ে পেপার প্লেন প্রতিযোগিতা সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, শিশুদের নিয়ে Food For Good কার্যক্রমের আওতায় শিশুদের ভালো খাবার খাওয়ানো, ইয়াতিম এবং অসহায় শিশুদের নিয়ে ফলাহার উৎসব, শিশুদের নিয়ে নিজ বিদ্যালয় আঙিনায় বৃক্ষরোপণ, পরিছন্নতা কার্যক্রম, শিশুদের মাঝে বন্যা এবং ডেঙ্গুসহ অন্যান্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিফ্রিং কার্যক্রম চলছে প্রতিনিয়ত।
বর্তমানে এইচডিটি কয়েকটি মক্তব কার্যক্রম পরিচালনা, মসজিদ নির্মাণ, বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসায় আর্থিক সহযোগিতা,ইমাম মুয়াজ্জিনদের বেতন, পাঁচটি অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকার বাজার,food for good কার্যক্রম, রমজানে ইফতার বাজার বিতরন ও ইদ মৃষ্টিমুখ,চরের মানুষদের নিয়ে কুরবানী উদযাপন, শিশুদের পেপার প্লেন প্রতিযোগিতা,বৃক্ষরোপণ, অসহায়ত্বের কারণে যারা বিদ্যালয় যাতে পারছি না তাদের শিক্ষা সহযোগিতা , ফ্রি রক্তের গ্রুপ নির্ণয় , রক্তদান কার্যক্রম নানা রকম স্বেচ্ছাসেবক প্রতিনিয়তই করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে ক্রাউড ফান্ডিং এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেন নাছির। পরে তাঁর প্রতিষ্ঠিত হেবিট্যাট ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট (এইচডিটি) দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন দাতব্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় যা সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছাসেবকরা বাস্তবায়ন করেন। যখন যে সমস্যা সামনে দেখছেন সেটা নিয়ে নিজ ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেই অর্থ সংগ্রহ করে সাথে সাথে সমাধানের ব্যবস্থা করছেন নাছির। তিনি বলেন, যখনই কোন ব্যক্তি বা সমাজের বিশেষ কোন সমস্যা চোখে পড়ে তখই সেটা সমাধানের জন্য ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে সমাধান করছি। যার বেশির ভাগ ফান্ড আসে আমার পরিচিত প্রবাসী বাংলাদেশীদের হাত ধরে। আমরা সাধারণত দূর্গম এলাকার মানুষদের জন্য বেশি কাজ করি। যেখানে খুব একটা সাহায্য পৌঁছায় না।
নাছিরের লক্ষ্য দেশের আরও বেশি দুর্গম এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম বিস্তৃত করা। তার এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে দেশের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
কপিরাইট © ২০২৪ (সাপ্তাহিক পিরোজপুর মুক্তবার্তা) সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Leave a Reply