কলামিস্ট –
বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী
মুহাম্মদ নাসীর উদ্দিন
————————————————
ফঢাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশে থাকতে পারলে ৪১ সালেও সাধারণ জনগন ভোট দিতে পারতো কি-না এজন্য এদেশের জনগন ছিলো হতাশ। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার থেকে শুরু করে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পর্যন্ত, এককথায় সবাই ছিলেন সিলেক্টেড। স্কুল, মাদরাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, চাকুরী, ব্যবসা, টেন্ডার, উন্নয়নের নামে লুটপাট সব একই সূত্রে গাঁথা। বাকস্বাধীনতা, নিরাপত্তা সবকিছু ছিলো নিয়ন্ত্রিত। দেশ ছিলো বিরোধী মত দমনের এক আজব জাতাঁকল। নাগরিক হিসেবে আমাদের কোথায়, কতটুকু অধিকার ছিলো? সকল দাপট ছিলো দলদাসদের হাতে।
দেশ চালাতে অর্থলাগে, পাচার কৃত অর্থ কি উদ্ধার হয়েছে? পিলখানা হ’ত্যার, শাপলাচত্বরের গনহ’ত্যা, জুলাই বিপ্লবের গণহ’ত্যার, আয়নাঘরের, নীল সাংবাদিকতার, দেশ বিরোধী চুক্তির, দুর্নীতির, নিরপরাধ মানুষগুলোর খু’ন,গু’মের কি বিচার হয়েছে?
জুলাই বিপ্লবের বিপ্লবীদের, জাতীয় বীরদেরকে সকল রাজনৈতিক দল একত্রে মিলেমিশে একটা সংবর্ধনা দেয়ার মত উদ্যোগ নিতে পেরেছেন? শহীদ, আহত, পঙ্গু সর্বস্বহারানো পরিবারগুলোর ভবিষ্যত নিয়ে কোন ঐকমত্য হয়েছে?
প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী প্রফেসর ড.মো. ইউনুসের সুযোগ্য নেতৃত্বের কারনে দেশ খানিকটা স্থিতিশীলতার দিকে এগুচ্ছে। কথা বলতে পারছেন, মিটিং করছেন, মন্ত্রনালয়ে যাচ্ছেন, এসপি, ডিসি অফিসে মিটিং করছেন, ফরমালিনমূক্ত উন্নত ফলে আপ্যায়িত হচ্ছেন। বেশতো আছেন। ক্ষমতায় না গিয়েও ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন। তাহলে সমস্যা কোথায়? একেই বলে জনগনের রাষ্ট্র। ইতোমধ্যে কেউ কেউ আয়েশী জীবনের উষ্ণতা খুঁজে পেয়েছেন। শত শত কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিচ্ছেন। অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার ভাগবাটোয়ারাও করে নিয়েছেন। প্রত্যন্ত পল্লী থেকে রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত অনেক কিছুর ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন। কে কতটা নিচ্ছেন পাবলিক জানে। যতটা ভাবছেন পাবলিক কিন্তু ততটা বোকা নয়, অন্ধও নয়, বধিরও নয়।
জুলাই বিপ্লবের পর প্রফেসর ড. মো. ইউনুস প্রধান উপদেষ্টার দ্বায়িত্ব না নিলে একজন কুতুবের নাম বলুন যিনি পলাতক শেখ হাসিনা, এদেশীয় তার সন্ত্রা’সী ক্যাডার, প্রশাসন, ভারতের মুকাবিলা করে মসনদে ১ দিন টিকে থাকতে পারতেন? প্রফেসর ড. মো. ইউনুস মজলুম জনপদে একজন রাহবার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি শেখ হাসিনা, তার দল এবং ভারতের জন্য জোঁকের মুখে চুন।
রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যে দেশ গড়ার জন্য পরিকল্পনার কথা শুনি না, কৃষি, শিক্ষা, ব্যবসা, বানিজ্য, শিল্পের জন্য কোন স্বপনের কথা শুনি না। নাগরিকদেরকে মানবসম্পদ হিসেবে তৈরি করার কথা শুনি না। দেশের ঐক্য, সাম্য, ন্যায্যতার আহবান শুনি না। অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধের উপায় সম্পর্কে শুনি না। টেঁকসই রাষ্ট্র কাঠামোর কথা শুনি না। দেশে তরুন-তরুনী, যুব-যুবতী, নাগরিক সমাজকে প্রশিক্ষিত করার কথা শুনি না। প্রবীনদের সহযোগিতার কথা শুনি না। বিভাজন দুর করে দেশের প্রশ্নে সকল নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করার কথা শুনি না।
প্রিন্টিং মিডিয়া, ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়া, বিদেশি প্রতিনিধি, জাতিসংঘ, ফেসবুক, টুইটার, ভাইভার যেখানে ঢুকবেন শুধু শুনবেন ছোট শিশুদের মতো চকলেট নামক নির্বাচনের ক্রন্দন ধ্বনি। নির্বাচন চাই, নির্বাচন চাই।
চলছে রমাদান। ইফতার প্রোগ্রামের নামে আনাচে-কানাচে নির্বাচনের ডামাডোল, প্রার্থীদের গুনকীর্তন, জনপ্রিয়তা আর শক্তিমত্তার জয়গান।
শেখ হাসিনার শেষ ১৭ বছরের আগেও এদেশে অনেক নির্বাচন দেখেছি, সরকার দেখেছি। এদেশের জনগনের খুববেশি স্মৃতিভ্রম ঘটে নি। তখনো কিন্তু আমরা অনেক কিছুতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, রাজপথে তাজা খু’ন দেখেছি। না, কিছুই ভুলি নি। দেশের মানুষ ভোলে নি। কারন তাদের অনেকে এখনো জীবিত আছেন। সুস্হ আছেন।
তুলনামূলক দেশবাসী এখন ভালো আছে। আগামীতে ক্ষমতায় কোন দল যাবেন, জানি না। তবে ক্ষমতায় দেশের মানুষের কল্যানে, কে কতটুকু কি করবেন, তা দেশের মানুষ এই ক’দিনে বুঝতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন। প্রত্যেকের মনেই ক্ষমতার সুখ সুখ অনুভব অনুরণিত হচ্ছে। তাই তারা হতভাগ্য নাগরিকদের দুঃখবোধ অনুধাবন করতে পারছেন না।
নির্বাচন, নির্বাচন, নির্বাচন। এসব শ্লোগান রয়ে সয়ে দিন। ধৈর্য ধরুন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার ভিষন ৪১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। পরিবেশ অস্থিতিশীল না করে প্রয়োজনীয় সংস্কারে সহযোগিতা করুন। কিছু সংস্কার কিছু সংগঠন ও তথাকথিত নেতার বিপক্ষে যেতে পারে। তবে এসব সংস্কারতো আপনাদের পরামর্শের ভিত্তিতে হবে। দেশ এবং দেশের নাগরিক উপকৃত হবে। আগে উপরিউক্ত বিষয়গুলো সমাধান করুন। প্রয়োজনীয় সংস্কার করুন। তারপর নির্বাচন করুন। যাদের বেশী ক্ষুধা তারাও অল্প অল্প খান। অল্প খেলে মরবেন না। অল্প খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, বেশিদিন বাঁচবেন।
বেশি খেলে নানাবিধ রোগ দেহমনে বাসা বাঁধবে। নির্বাচন হবে, রাজনৈতিক কোন না কোন দল আপনারাই ক্ষমতায় যাবেন। আমরা আমজনতা আপনাদের আনুগত্য মেনেই দেশের জন্য কাজ করবো। আমরা আপনাদের সুযোগ্য নেতৃত্বের জন্য মহান মা’বুদের দরবারে ফরিয়াদ জানাবো।
কপিরাইট © ২০২৪ (সাপ্তাহিক পিরোজপুর মুক্তবার্তা) সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Leave a Reply