লেখক ও কলামিস্ট
মুহাম্মদ নাসীর উদ্দিন (প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী WMCA)
জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ সকল ঝুঁকির অন্যতম হলো- সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং নদ-নদী সমূহে মিঠা পানির প্রবাহ হ্রাস পাওয়া। ফলে, বাংলাদেশের সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মাটি ও নদ-নদীতে সমুদ্রের পানি ঢুকে লবণাক্ততা এক চরম সমস্যা রূপে আবির্ভূত হয়েছে। হাজার হাজার হেক্টরের বেশি জমি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। এ সমস্যার সমাধান অথবা এর সাথে খাপ-খাওয়ানোর উপায় সমূহ খুঁজে বের করে কাজে লাগানো আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের জন্য আবশ্যক।
পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা সুন্দরবনের নিকটবর্তী। সুন্দরবন রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত গাছ কেওড়া, বাইন, খরমোছা,কুনাইল, কাঁকড়া, সুন্দরী, হ্যাতাল যা লবণাক্ত মাটিতে জন্মায়।
পিরোজপুর হুলার হাট হয়ে জিয়ানগরের কলারনসহ পিরোজপুর জেলার নদীসমূহের তীরে সারি সারি করে এসব গাছ রোপন করলে প্রকৃতি সবুজে ভরে উঠবে। প্রকৃতির এ-দৃশ্য নজর কাড়বে সবার।
পুষ্টিগুনেও এ-সব গাছের ফল আপেল ও কমলার তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। যা মানবদেহের সকল প্রকার ভিটামিন, মিনারেলস, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। পশুপাখি, মাছ ও জলজপ্রানী তার প্রয়োজনীয় খাবার পাবে। বিলুপ্তির পথে যেসব পাখপাখালি, পশুপাখি, মাছ, জলজপ্রানী তারা পুনরায় বংশ বিস্তার করে প্রকৃতির ভারসম্য রক্ষা করতে পারে। প্রকৃতি ফিরে পাবে তার প্রকৃত মনোমুগ্ধকর রূপ।
এ-সব গাছের ফল সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় চাষ ও বাণিজ্যিকীকরণ হলে অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে।
এ-সব গাছ সাধারণত শক্ত হয়, সহজে লবনাক্ত পানি ও মাটিতে বেড়ে ওঠে, পলিমাটিতে সহজে শিকড় ছড়িয়ে যায় এবং মাটি মজবুত করে। এ-সব বৃক্ষরাজি অধিক উঁচু ও লম্বা হয় না। ফলে ঝড় জ্বলোচ্ছাসে নদীর তীরবর্তী উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষায় সাহায্য করে। নদীর পাড় ভাঙ্গবে না বরং নদীর পাড় আরো দৃঢ়ভাবে শেকড়ে আটকে রাখবে।
বিগত সরকারগুলো দুর্নীতির জন্য মেঘা প্রজেক্টের নামে বেড়ীবাঁধসহ নানা প্রকল্প করেছে কিন্তু বানভাসি মানুষ, রাষ্ট্র কোন উপকার পায় নি। বরং আরো ক্ষতি হয়েছে। বারবার বেড়িবাঁধে বরাদ্দ এসেছে। সে বরাদ্দে কোটি কোটি টাকা হরিরলুট হয়েছে।
পিরোজপুর- ১ আসনের মাননীয় এমপি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর (রাহি.) উদ্যোগে বালিপাড়া-চন্ডিপুর-কলারন অঞ্চলে যে বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়েছিলো। প্রথমে সেই বেড়িবাঁধ নির্মানের কোন "বাই ল" ছিলো না। ফলে প্রজেক্ট নির্মান ও বাস্তবায়নে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়ে ছিলো। আমি WMCA প্রথম এবং প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী। তখন আল্লামা সাঈদীর (রাহি.) নির্দেশে তৎকালীন পিরোজপুর জেলা পানিসম্পদের সহ.প্রকৌশলী, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে পরামর্শ করে আমার নেতৃত্বে সর্বপ্রথম বিজ্ঞানসম্মত একটি "বাই ল" তৈরি করা হয়। "বাই ল" তৈরিতে আমাকে সার্বিক সহযোগিতা, পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনা দিয়েছেন WMCA'র প্রথম এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবীদ জনাব মো. হাবীবুর রহমান মুন্সী।
যা এলজিইডির পানিসম্পদ অধিদফতর সারা দেশে আংশিক বাস্তবায়ন করেছে। পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করে নি ফলে তারা লক্ষ্য অর্জন করতে পারে নি।
ফ্যাসিস্ট দখলদার শেখ হাসিনা ক্ষমতা দখলের সাথে সাথে অযোগ্য, অদক্ষ, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী আউয়ালীও অসভ্য, বর্বর, লুটেরা বেড়িবাঁধ নির্মান ও রক্ষা কমিটি "WMCA" দখল করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। যা নিরপেক্ষ, উধর্বতন তদন্ত করলে সত্যতা বেড়িয়ে আসবে।
"বেড়িবাঁধ বাস্তবায়নে" WMCA এর বিধিমালা বাস্তবায়ন না করে বিভিন্ন ঝড়জ্বলোচ্ছাসের সময় দখলদার লুটেরা সরকারী কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সরকারী বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছে। ফলে রাষ্ট্র এবং উপকূলী অঞ্চলের জনগন বেড়ীবাঁধের সুফল হতে বঞ্চিত হয়েছে।
সচেতনতা ও দ্বায়িত্বশীলতার অভাবে সরকার জৈব সারের পরিবর্তে রাসায়নিক সার বিতরন করে যেমন জমির উর্বরতা নষ্ট করছে, দির্ঘমেয়াদী বিষ ঢুকিয়ে মানবদেহ, ফুল- ফসল, মাছ, পশুপাখি ও প্রকৃতি ক্ষতি করছে। বেড়ীবাঁধ নির্মান করা হয়েছিল কিন্তু তার বাস্তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করে লুটপাট করেছে। আর দীর্ঘদিন যাবৎ এ-অঞ্চলের ঝড়-জলোচ্ছাস, বন্যায় ঘর-বাড়ি, প্রানহানী, গবাদিপশু, গাছপালা হারিয়ে জনসাধারণ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপকূলীয় এলাকার খাল, নদীর তীরবর্তী অনাবাদী লবণাক্ত জমিতে বাস্তব সম্মত ও আধুনিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে এ-সব বৃক্ষ ব্যাপকভাবে জন্মানোর উদ্যোগ নিলে প্রান্তিক জনগণের বাড়তি আয়ের উৎস হবে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত হবে এবং উপকূলীয় পরিবেশের গুণগত মানের উন্নয়ন হবে। এমনকি নদী ভাঙ্গন রোধ হবে। ঝড় জ্বলোচ্ছাসে, বন্যায় হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল রক্ষা পাবে। নদীর তীরবর্তী মানুষের ঘরবাড়ি, প্রান, গবাদিপশু রক্ষা পাবে।
"বাই ল"তে উল্লেখিত বেড়ীবাঁধ এলাকায় পানির নিয়ন্ত্রণ, মিষ্টি পানি সংরক্ষণ, মৎস চাষ, গবাদি পশু পালন, বৃক্ষরোপন, জনসচেতনতা ও প্রশিক্ষনের ব্যবস্হা যথাযথ হলে বহু আগে বেড়ীবাঁধ এলাকার মানুষ আত্মনির্ভরশীল হতে পারতো।
নদী তীরবর্তী উপকূলে কেওড়া, ছৈলা, গোলপাতা, সুন্দরী, গেওয়া, গড়ান, পশুর, বাইন, হেঁতাল, খামু, লতা সুন্দরী, ধুন্দুল, আমুর, ছৈলা, ওড়া, কাঁকরা, সিংরা, ঝানা, খলশি বৃক্ষরোপন করলে এ-অঞ্চলটি হয়ে উঠতে পারে পর্যটন এলাকা।
দেশ-বিদেশের পর্যটন প্রেমী মানুষকে টেনে আনবে নয়নাভিরাম এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে। এই এলাকা এবং পিরোজপুর হয়ে উঠবে বৈদেশিক আয়ের অন্যতম উৎস।
লেখক ও কলামিস্ট
মুহাম্মদ নাসীর উদ্দিন
সহকারী নির্বাহী সম্পাদক, পিরোজপুরমুক্ত বার্তা
সহ সভাপতি: পিরোজপুর সাংবাদিক ফোরাম